প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব
যশোর জেলার স্মরণীয় ক’জন
১। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত
২। কর্মবীর মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ
৩।রায় বাহাদুর যদুনাথ মজুমদার (১৮৫৯-১৯৩২)
৪। জ্যোতিস্ক বিজ্ঞানী রাধাগোবিন্দ চন্দ (১৮৭৮-১৯৭৫)
৫। সাংবাদিক ও সাহিত্যিক শিশির কুমার ঘোষ
৬। এ্যাডভোকেট শহীদ মশিউর রহমান
৭। যতীন্দ্রনাথ মূখোপাধ্যয় (বাঘা যতীন, ১৮৭৯-১৯১৫)
৮। প্রফেসর শরীফ হোসেন (১৯৩৬-২০০৭)
৯। সংগ্রামী মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন (১৯১৬-১৯৯৭)
১০। বেগম আয়েশা সরদার (নারী আন্দোলনের নেত্রী, ১৯২৭-১৯৮৮)
১১। শিক্ষাবিদ আব্দুর রউফ (১৯০২-১৯৭১)
১২। ওয়াহেদ আলী আনসারী
১৩। বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ এ্যাডভোকেট রওশন আলী
১৪। কে পি বসু (কালিপদ বসু, ১৮৬৫-১৯১৪)
১৫। আলোকচিত্রকর মোঃ সফি
১৬। মোশাররফ হোসেন
মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরেুল্লাহ (১৮৬১-১৯০৭)
ভাব মন দমে দম, রাহা দূর বেলা কম
ভুখ বেশী অতি কম খানা।
ছামনে দেখিতে পাই পানি তোর তরে নাই
কিন্তু রে পিয়াসা ষোল আনা !
দেখিয়া পরের বাড়ী জামা জোড়া ঘোড়া গাড়ি
ঘড়ি ঘড়ি কত সাধ মনে,
ভুলেছ কালের তালি, ভুলেছ বাঁশের চালি,
ভুলিয়াছ কবর সামনে।
পরিচিতি:
কবিতাটিতে মানবদেহের পরিণাম এবং সংসারের ধন-জন ও বংশ মর্যাদা কিভাবে কবরে বিলীন হয়ে যায়, কবি এই ভাবার্থটি প্রস্ফূটিত করে তুলেছেন।
এই কবিতাটির রচয়িতা-আধ্যাত্নিক চিন্তা চেতনার সাধক, বঙ্গের খ্যাতিমান বাগ্মী, সমাজসেবক, সমাজ সংস্কারক, সাহিত্যিক ও ধর্ম প্রচারক মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর ১৮৬১ সালের ২৬ ডিসেম্বর জেলার ঝিনাইদহ মহাকুমার কালীগঞ্জ থানাধীন বার বাজারের নিকটবর্তী ঘোপ নামক গ্রামে নিজ মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস ছাতিয়ানতলা গ্রামে। এই গ্রামে তাঁর পূর্ব পুরুষরাই সর্বপ্রথম বসতি স্থাপন করেন। তাঁর পিতার নাম মুন্শী মোহাম্মদ ওয়ারেস উদ্দীন।
শিক্ষাজীবন:
সংসারের নিদারুন দরিদ্রতা ও পিতার অকাল মৃত্যুর কারণে মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বিঘ্নিত হয়। এ সময় তিনি নিম্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা সম্পন্ন করে দুর্দ্দমনীয় জ্ঞান তৃষ্ণার তাড়নায় গৃহত্যাগ করে কয়ালখালি গ্রাম নিবাসী মোঃ মোস্হাব উদ্দীনের নিকট তিন বৎসর এবং পরবর্তীতে করচিয়া নিবাসী মোহাম্মদ ইসমাইলের নিকট তিন বৎসর আরবী ও ফারসী ভাষা শিক্ষা করেন। বিশ্ব বরেণ্য কবি শেখ সাদীর পান্দেনামা, গুলিস্থা ও বুস্তা তাঁর জীবনের উপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেছিল। তৎকালীন সময়ে উক্ত ২টি পুস্তকের ওপর জ্ঞান ও হৃদয়ঙ্গমতা কোন ব্যক্তির জ্ঞান ও শিক্ষার মাপ কাঠি বিবেচিত হত। তিনি বিভিন্ন সভায় তাঁর বক্তৃতার মধ্যে এই সমস্ত গ্রন্থ থেকে অতি মধুর সুরে ফরাসী বয়াত আবৃত্তি করে মর্মষ্পর্শী ভাষায় শ্রোতাকুলকে আপ্লুত করতেন।
উর্দু ভাষায় ও তাঁর ব্যাপক ব্যুৎপত্তি ছিল। বিভিন্ন উর্দু পুস্তক ও সাময়িক পত্র পত্রিকাদি তিনি নিয়মিত পড়াশোনা করতেন।
জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি জীবিকার অন্বেষণে তিনি খোজার হাটের এক দর্জির দোকানে সেলাইয়ের কাজ শেখা শুরু করেন। এ সময়ও তিনি মুন্শী তাজ মাহমুদের নিকট উর্দু ও ফারসী সাহিত্যের উপর জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন।
মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ দর্জি বিদ্যায় উন্নত শিক্ষা গ্রহণের জন্যে খড়কী গ্রামের ‘সাহেব বাড়ীর দর্জি’ জাহা বকস্ মীর্জার নিকট দর্জির কাজ শেখা আরম্ভ করেন। এখানে তিনি দীর্ঘ ৫/৬ বৎসর অবস্থান করে দর্জি পেশায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। এই ভিন্নধর্মী কাজের মাঝেও তিনি জ্ঞান অর্জনে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। যশোর শহরের দড়াটানায়ও তিনি এক উন্নত মানের দর্জির দোকান চালু করেন।
ইসলাম ধর্মের প্রচারক:
১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার ভাগ্য বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে এদেশের মুসলমানদেরও ভাগ্য বিপর্যয় ঘটে। বাংলাদেশের সমস্ত গ্রাম-গঞ্জ শহর বাজারের খ্রীস্টান পাদ্রীদের খ্রীস্টান ধর্ম প্রচারের প্রবল প্রচেষ্টা বৃদ্ধি পায়। পাদ্রীদের নানা কুহেলিকাপূর্ণ কূট তর্কজাল সমাচ্ছন্ন বক্তৃতা শুনতে শুনতে অল্প বয়স্ক সত্যানুসন্ধিৎসু মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ বিচলিত হয়ে পড়েন। এরূপ এক সংকটকালীন মুহূর্তে প্রসিদ্ধ বক্তা ও ইসলাম প্রচারক হাফেজ নিয়ামতুল্লাহ কর্তৃক লিখিত ‘খ্রীস্টান ধর্মের ভ্রষ্টতা’ নামক এবং প্রথম জীবনে খ্রীস্টান ধর্ম প্রচারক ও পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম প্রচারক পাদ্রী ঈশান চন্দ্র মন্ডল ওরফে মুন্শী মোহাম্মদ এহসানুল্লাহর ‘ইনজিলে হয়রত মোহাম্মদের খবর আছে’ গ্রন্থ দু’খানি অধ্যয়নের পর তিনি নতুন আলোর সন্ধান পান।
ইসলামের নতুন তেজে নতুন শক্তিতে পূর্ণ হয়ে দীপ্ত মিহিরের ন্যায় নিত্য পরিপূর্ণ ও প্রতিভাত হতে লাগলেন। মুসলিম বীর মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ পাদ্রীদের অনুকরণে হাটে মাঠে ঘাটে তাঁদের বক্তৃতার তীব্র প্রতিবাদ শুরু করলেন। হাটের একদিকে পাদ্রীদের বক্তৃতা অন্য প্রান্তে মুন্শীর বক্তৃতা। অতি অল্প সময়ে তরুণ মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর ধর্ম প্রচারের ঘটনা গ্রামে, শহরে এবং সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
মুন্শী সুদূর দার্জিলিং শহরেও দর্জির দোকান খুলেছিলেন এবং সেখানেও পাদ্রীদের একই অনাচার ও কার্যকলাপ দেখে তাঁর মন প্রাণ ব্যাকুল ও ব্যথিত হয়ে উঠলো। তিনি সেখানেও ধর্ম প্রচারের কাজ আরম্ভ করেন। ধর্ম-জ্ঞানে পরিপূর্ণতা লাভের জন্যে তিনি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ অধ্যয়ন শুরু করেন। মুন্শী মেহেরুল্লাহ মহীশুর থেকে প্রকাশিত ‘মনসুরে মোহাম্মদী’ এবং হয়রত সোলায়মান ওয়ার্সির লেখা কেন আমি আমার পৈত্রিক ধর্ম ত্যাগ করেছিলাম’, ‘কেন আমি ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী হয়েছিলাম’ ও ‘প্রকৃত সত্য কোথায়’ গ্রন্থগুলি পাঠ করে ব্যাপক উৎসাহিত ও উপকৃত হয়েছিলেন।
মেহেরুল্লাহ দার্জিলিং থেকে যশোরে ফিরে এসে আবার যশোরের বিভিন্ন এলাকায় ধর্ম প্রচারের কাজে আত্ননিয়োগ করেন। এসময় তাঁর সহযোগী হিসেবে খ্রীস্টানদের বিরুদ্ধে ধর্ম প্রচারে অবতীর্ণ হতেন যশোরের ঘোপ এলাকার বাসিন্দা মুন্শী গোলাম রব্বানী ও ঘুরুলিয়ার মুন্শী মোহাম্মদ আব্দুল কাশেম।
মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ইসলাম ধর্ম প্রচারের এবং খ্রীস্টানদের মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে নিরস্ত্র জেহাদ ঘোষণা করেন এবং জেহাদকে সার্থক ও সফল করার লক্ষ্যে তিনি কলকাতার মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতা মুন্শী রিয়াজ উদ্দিন আহাম্মদ ও মুন্শী আব্দুর রহিম প্রমুখ ধর্মপ্রাণ, মুসলিম হিতৈষী নেতাদের সাথে আলোচনা করেন। মুসলিম সমপ্রদায়ের কল্যাণ ও খ্রীস্টান পাদ্রিদের অপপ্রচারের হাত থেকে ইসলাম ধর্ম তথা মুসলিম সমাজকে রক্ষা করার অভিপ্রায়ে কলকাতার ‘না-খোদা’ মসজিদে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় নিখিল ভারত ইসলাম প্রচার সমিতি নামে এক সমিতি গঠন করা হয়। এই সমিতি কর্তৃক বাংলা ও আসামে ইসলাম ধর্ম প্রচারের জন্যে মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি বঙ্গ ও আসামের বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্দীপ্তময় যুক্তিপূর্ণ বক্তৃতার মাধ্যমে মুসলমানদের ভাঙ্গা বুক আবার সতেজ করে তোলেন।
খ্রীস্টান ধর্ম প্রচার মিশনের অন্যতম কর্তা রেভাঃ জন জমিরুদ্দিন ইসলাম ধর্ম প্রচারে এক সময় মুন্শী মেহেরুল্লাহর সঙ্গী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মুন্শী মেহেরুল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ইসলাম ধর্মের ব্যাপক বিরোধিতা করেন।
সাহিত্য কর্ম:
১৮৯২ সালে জুন মাসে ‘খ্রীস্টীয় বান্ধব’ নামক মাসিক পত্রিকায় জন জমিরুদ্দিন ‘আসল কোরান কোথায়’ শীর্ষক এক বিভ্রান্তিমূলক প্রবন্ধ লেখেন। এই বিভ্রান্তিকর প্রবন্ধের জবাবে মুন্শী মেহেরুল্লাহ তৎকালীন প্রচলিত বিখ্যাত সাপ্তাহিক ‘সুধাকর’ পত্রিকায় (১৮৯২ সালের জুন মাসের ২০ ও ২৭ তারিখে) ‘ঈসায়ী বা খ্রীস্টানী ধোকা ভঞ্জন’ নামক সুদীর্ঘ গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করে জন জমিরুদ্দিন কর্তৃক লিখিত ছয়টি প্রশ্নের যুক্তিপূর্ণ উত্তর প্রদান করেন। মেহেরুল্লাহর প্রবন্ধের উত্তরে জমিরুদ্দিন ‘সুধাকর’ পত্রিকাতেই ক্ষুদ্র আরেকটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। এর উত্তরে মুন্শী মেহেরুল্লাহ ‘আসল কোরান সর্বত্র’ নামক আর একটি দীর্ঘ ও তথ্য যুক্তিপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
জন জমিরুদ্দিন প্রবন্ধটি পড়ে নীরব হয়ে পড়েন। মুন্শী মেহেরুল্লাহর সহযোগী হবার আশা ব্যক্ত করে খ্রীস্টান হতে পুনরায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জন জমিরুদ্দিন হতে শেখ মুন্শী জমিরুদ্দিন নাম ধারণ করেন।
খ্যাতিমান ইসলাম প্রচারক মুন্শী মেহেরুল্লাহর ধর্ম প্রচারের ইতিহাসে এটি এক বিষ্কয়কর ও উল্লেখযোগ্য ঘটনা। জমিরুদ্দিন কর্তৃক লিখিত ‘মেহের চরিত’ নামক গ্রন্থে তিনি মুন্শী মেহেরুল্লাহর ধর্ম প্রচার সম্পর্কে উচ্ছ্বাসিত প্রশংসা করেছেন।
মুসলিম জাতির উন্নয়নে সাহিত্য ও সংবাদ পত্রের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ জাতীয় সাহিত্য সৃষ্টির জন্যে অক্লান্ত প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন।
এ উদ্দ্যেশে তিনি চব্বিশ পরগণা নিবাসী শেখ আব্দুল রহিমের সাথে যোগাযোগ করেন। তখনকার দিনে মুন্শী আবদুর রহিমের সম্পাদনায় ও মুন্শী শেখ রিয়াজউদ্দীনের প্রকাশনায় কলকাতা থেকে মুসলিম ঐতিহ্যবাহী ‘সুধাকার’ পত্রিকাটি প্রকাশিত হত। ‘মিহির’ ও ‘সুধাকার’ পত্রিকা দুটির উন্নতি ও প্রচারের জন্যে মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর বিশেষভাবে প্রচেষ্টা চালান। ‘মিহির’ ও ‘সুধাকার’ নামক মাসিক পত্রিকারও তিনি পৃষ্ঠপোষকতা ও এই পত্রিকাগুলির নিয়মিত লেখক ছিলেন।
বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্যে ও জাতীয়তা গঠনের মূলে এই মনীষীসহ শেখ ফজলুল করিম সাহিত্য বিশারদ, মৌলভী রেয়াজুদ্দিন আহাম্মদ, কবি মোজাম্মেল হক ও সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী’র নাম বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য।
১৮৮৬ খৃঃ মুন্শী মেহেরুল্লাহ প্রথম প্রকাশিত বই ‘খ্রীস্ট ধর্মের অসারতা’ প্রকাশিত হয়। এই বইটি খ্রীস্টান ধর্ম প্রচারকদের কার্যকলাপ সম্পর্কে ও খ্রীস্টান ধর্মগ্রন্থ বাইবেল সম্পের্কে সমালোচনা করে লেখা।
তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘মেহেরুল এসলাম’। গ্রন্থখানির ভাষা অত্যন্ত সহজ সরল, সাধারণ পাঠকের বোঝার উপযোগ্য। গ্রন্থটি পুঁথি আকারে লিখিত। এই গ্রন্থে একেশ্বরবাদের মাহাত্ন্য প্রচারিত হয়েছে।
বিখ্যাত পারস্য কবি শেখ সাদির পান্দেনামা পুস্তকটি অনুবাদ করে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ লিখিত ‘রদ্দে খ্রীস্টান’ এবং ‘খ্রীস্টান ধর্মের অসারতা’ নামক পুস্তক দু’খানি তাঁর বক্তৃতা অপেক্ষা অনেক কার্য উপযোগী। এই পুস্তক দু’খানি যেন সারা দেশ ব্যাপি খ্রীস্টান পাদ্রীদের মিথ্যা প্রচারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়। ‘রদ্দে খ্রীস্টান’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খন্ড ‘দলিলুল ইসলাম’ প্রকাশের পূর্বেই মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ইন্তেকাল করেন।
মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহর রচিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা আর্জন করেছিল ‘বিধায় গঞ্জনা’ ও ‘হিন্দু ধর্ম রহস্য’। হিন্দু বিধবাদের জীবনের করুণ চিত্র মর্মষ্পর্শী ভাষায় সমালোচনাকারে গদ্য ও পদ্যের মিশ্রণে ‘বিধবা গঞ্জনা’ গ্রন্থটি মুন্শী মেহেরুল্লাহর এক অপূর্ব সাহিত্য সৃষ্টি।
“দেবলীলা বা হিন্দু ধর্ম রহস্য’ নামক গ্রন্থটিতে পৌরাণিক দেবদেবীগণের লীলা খেলার কাহিনী নিয়ে রচিত। গ্রন্থটির ভিত্তি হচ্ছে হিন্দু ধর্মশাস্ত্র। গ্রন্থ দু’খানিতে হিন্দু সমাজের সংকীর্ণতা ও বিধবাদের মনঃপীড়ার করুণ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
মুন্শী মেহেরুল্লাহর মৃত্যুর পর কতিপয় স্বার্থান্বেষী হিন্দু সমাজপতির প্রচেষ্টায় ইংরেজ সরকার উক্ত পুস্তক দু’খানি বাজেয়াপ্ত করে এবং প্রকাশকের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বঙ্গেরখ্যাতিমান বাগ্মী, সমাজ সংস্কারক, সাহিত্যিক ও ধর্ম প্রচারক মুন্সী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ-এর পৈত্রিক বাড়ী যশোর সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলাগ্রামে। তিনি পান্দানামা নামক সেখ সাদির সুবিখ্যাত কাব্যের অনুবাদ সহ ”রদ্দে খৃষ্টান”ও “দলিদোল ইসলাম”নামক দুখানি গ্রন্থ রচনা করেন। মেহেরু্ল্লাহ’র রচনাবলীর মুল উদ্দেশ্য ধর্ম বিষয়ক তর্কে ইসলামের মহত্ব প্রতিষ্ঠা করা। খৃষ্টান ধর্ম প্রচারকদের তীব্র সমালোচনার যৌক্তিক জবাব উপস্থাপন করে সাধারণ মানুষকে ধমান্তরের হাত থেকে রক্ষা করেন।
পরলোকগমন:
বঙ্গের অদ্বিতীয় বাগ্মী, ইসলাম ধর্ম প্রচারক মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ ১৯০৭ সালের ৭ জুন শুক্রবার জুম্মার নামাজের সময় পরলোকগমন করেন।
এই কর্মবীর মুন্সি মেহেরুল্লাহর মুত্যুর পর তাঁর নিজ গ্রাম ছাতিয়ানতলায় তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি স্টেশন প্রতিষ্ঠা করে তার নামকরণ করা হয় ‘মেহেরুল্লাহনগর স্টেশন’।
অসাধারণ বাগ্নী, সমাজসংস্কারক, ইসলাম প্রচারক মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ এর ১৯৯৫ সালের ৭ জুন ৮৭ তম মৃত্যু বার্ষিকীতে মুন্শী মেহেরুল্লাহ এর ছবিসহ ডাকটিকিট ও স্মারক খাম ডাক বিভাগ প্রকাশ করেন।
১৯০১ সালে মুন্শী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ কর্তৃক যশোরের মনোহরপুর গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় মাদ্রাসায়ে কেরামতিয়া। পরবর্তীতে তাঁর প্রচেষ্টায় মাদ্রাসাটি এম. ই স্কুলে রূপান্তরিত হয়ে আজকের পর্যায়ে উন্নীত হয়। এলাকাবাসী ও কাজী নজরুল ইসলাম কলেজের উপাধ্যক্ষ মশিউল আযমের প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টি এই কর্মবীরের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নামকরণ করা হয় মুন্শী মেহেরুল্লাহ একাডেমী। পরে তাদের প্রচেষ্টায় মুন্শী মেহেরুল্লাহ সমাজকল্যাণ সংস্থা ও মুন্শী মেহেরুল্লাহ ফাউন্ডেশন গড়ে উঠে।
No comments